এক গুনাহগার লোক, যে ৯৯ জনকে হত্যা করেছিল
আজ আমরা শুনব এমনই এক কাহিনি—এক গুনাহগার, যিনি ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ক্ষমার দরজা তাকে জান্নাত দেখিয়েছে।
📖 হাদীসের মূল কাহিনি
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যিনি ৯৯ জনকে হত্যা করেছিল। তারপর সে জানতে চাইল—তওবা করলে কি আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন?
সে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির কাছে গেল এবং জিজ্ঞেস করল, ‘আমি ৯৯ জনকে খুন করেছি, আমার কি তওবা কবুল হবে?’
লোকটি বলল, ‘না, তোমার কোনো সুযোগ নেই।’
তখন সে লোকটিকেও হত্যা করল, সংখ্যা দাঁড়াল ১০০।”
— (সহীহ মুসলিম: ২৭৬৬, সহীহ বুখারী: ৩৪৭০)
🕊️ এরপর কী ঘটল?
তবে এই গুনাহগার থেমে গেল না। তার অন্তর ভেঙে যাচ্ছিল। সে বুঝতে পারছিল, এভাবে চলা যাবে না। আবার সে একটি পious (আল্লাহভীরু) আলেমের কাছে গেল। তাকে একই প্রশ্ন করল।
আলেম বললেন:
“তোমার তওবার দরজা এখনো খোলা। আল্লাহর দয়া থেকে কেউ হতাশ হয় না।”
আলেম তাকে পরামর্শ দিলেন—তাকে সেই জনপদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে এমন এক জনপদে যেতে হবে, যেখানে ভালো লোকেরা বাস করে, যারা আল্লাহর ইবাদত করে। তার গুনাহর পরিবেশ থেকে দূরে চলে যেতে হবে।
এই কথা শুনে গুনাহগার লোকটি মনস্থ করল—এবার আমি নতুন জীবন শুরু করবো।
🛤️ মৃত্যুর পথে — জান্নাত না জাহান্নাম?
সে পথ চলতে লাগল। কিন্তু অল্পদূর যাওয়ার পর হঠাৎ সে মারা গেল। তখন ফেরেশতারা এল।
দয়া ও জান্নাতের ফেরেশতারা বলল, “সে তওবা করতে চেয়েছিল, নতুন পথে যাচ্ছিল, তাই তার জান্নাত প্রাপ্য।”
আযাবের ফেরেশতারা বলল, “সে তো কোনো ভালো কাজই করেনি!”
তখন আল্লাহ একটি সিদ্ধান্ত দিলেন—দুই শহরের দূরত্ব পরিমাপ করা হোক। যদি সে জান্নাতের শহরের কাছাকাছি হয়ে থাকে, তবে সে জান্নাত পাবে।
📏 আল্লাহর অদ্ভুত বিচার!
ফেরেশতারা পরিমাপ করল। দেখা গেল—সে ভালোদের শহরের কাছাকাছি ছিল মাত্র এক বিঘত। অর্থাৎ এক হাত বা এক ধাপ দূরে।
আল্লাহ তাঁর দয়া দিয়ে ভূমিকে সংকুচিত করে দিলেন, যাতে মৃত ব্যক্তির মরদেহ ভালো শহরের কাছেই থাকে। ফলে জান্নাতের ফেরেশতারা তাকে নিয়ে গেল—জান্নাতের পথে।
🧠 এই গল্প থেকে কী শেখা যায়?
যত বড় গুনাহই হোক, যদি অন্তর ভাঙে, চোখে পানি আসে, আর হৃদয়ে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা থাকে—আল্লাহ দয়া করেন।
২. সৎ পরিবেশে ফিরে যাওয়া জরুরি
আল্লাহভীরু মানুষদের কাছে যাওয়া, পরিবেশ পরিবর্তন করা তাওবার বাস্তব রূপ। খারাপ জায়গায় পড়ে থাকলে গুনাহে ফিরে যাওয়াই স্বাভাবিক।
৩. মানুষ নয়, আল্লাহই বিচারক
প্রথম যাকে সে জিজ্ঞেস করেছিল, তিনি ইলম না থাকায় ভুল fatwa দিলেন। গুনাহগার তাকে হত্যা করল। এটি আমাদের শেখায়—কারও ঈমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মন্তব্য অর্থহীন।
৪. নিয়্যাহই অনেক বড় আমল
তাকে পথে পাওয়া গেল—তাওবা এখনও শুরু হয়নি, কিন্তু সে যাচ্ছিল। আর আল্লাহ সেই নিয়্যাহ কবুল করলেন। কাজ শুরু না করেও নিয়্যাহ তার জান্নাতের দরজা খুলে দিল।
৫. আল্লাহর দয়া সীমাহীন
এই হাদীসটি ইসলামের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক হাদীসগুলোর একটি। ১০০ জন মানুষ খুন করেছে—তারপরও জান্নাত পেয়েছে? হ্যাঁ—কারণ আল্লাহ বলেন:
“তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।”
— (সূরা যুমার: ৫৩)
🌟 উপসংহার: আপনি কি পথে আছেন?
এই কাহিনি শুধুই গল্প নয়—এটি একটি আয়না। আমরা সবাই গুনাহ করে থাকি। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে।
আপনার জীবনেও হয়তো এমন সময় এসেছে—যখন অন্তর কেঁদে উঠেছে, ফিরে আসতে চেয়েছে। এখনই সময়—তওবা করার, ফিরে আসার, পরিবর্তনের।
কারণ আপনি জানেন না—আপনার সেই একটি কান্না, একটি তওবা, হয়তো আজকেই আপনার জান্নাতের পথ খুলে দেবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন