যেভাবে শুরু হলো কোরবানি: ইতিহাসের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা
🔥 আগুন জ্বলছিল।
না, কোনো চুল্লিতে নয়।
এটা ছিল এক পিতার হৃদয়ে জ্বলে ওঠা অস্থিরতা—
যেখানে একপাশে ছিল নবীর স্বপ্নে দেখা হুকুম,
আর অন্যপাশে ছিল তাঁর চোখের মণি, বহুপ্রতীক্ষিত সন্তান।
শুধু কল্পনা করুন—
আপনি দীর্ঘ বছর আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে সন্তান চেয়েছেন।
যখন সেই সন্তানকে আল্লাহ আপন করলেন,
তখনই সেই রব আপনাকে বলছেন—
“এখন তাকে কোরবানি দাও, আমার জন্য।”
হ্যাঁ, আজ যে কোরবানি আমরা করি পশুর,
সেই কোরবানির সূচনা হয়েছিল একটি হৃদয়ের গভীরতম ত্যাগ দিয়ে।
একটি অসম্ভব প্রতিজ্ঞা দিয়ে।
একটি কান্নার মধ্য দিয়ে—যার নাম ছিল ইব্রাহিম (আঃ)।
আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন যিনি,
তিনি ছিলেন এক ত্যাগের মূর্ত প্রতীক—ইসমাইল (আঃ)।
📢 স্বাগতম জানাই আপনাকে Ummah Kantho-তে—
যেখানে আমরা শুধু ইতিহাস বলি না,
আমরা হৃদয়কে নিয়ে যাই সেই সময়ের বাস্তবতায়,
যেখানে চোখ বুজলেই আপনি দেখতে পাবেন নবীদের কান্না,
শুনতে পাবেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিলীন হয়ে যাওয়া এক ভালোবাসা।
ইব্রাহিম (আঃ) যখন তাঁর পুত্রকে বলেন,
“হে আমার প্রিয় সন্তান! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে,
আমি যেন তোমাকে জবেহ করছি। তুমি কি বলো?”
— (সূরা আস-সাফফাত: ১০২)
একটি সন্তান তখন কী উত্তর দিতে পারত?
“না বাবা, আমি একা এসেছি। আমার জীবন আমার।”
কিন্তু ইসমাইল (আঃ) বলেন—
“হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তাই করুন।
ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।”
— (সূরা আস-সাফফাত: ১০২)
এত শান্ত, এত নির্মল উত্তর!
এটা শুধু আনুগত্য নয়,
এটি ঈমানের এমন এক রূপ,
যেখানে মৃত্যু থেকেও বড় হয়ে ওঠে—আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা।
তখন ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর চোখে কাপড় বেঁধে,
হৃদয় থরথর করতে করতে ছুরি চালান।
আর সেই ছুরি চলে না।
আল্লাহ তা বন্ধ করে দেন।
📖 কুরআনে বলা হয়:
“আমি তাকে একটি বড় কোরবানির মাধ্যমে মুক্ত করলাম।”
— (সূরা আস-সাফফাত: ১০৭)
সেই দিন আল্লাহ আমাদের শিখিয়ে দেন—
কোরবানি মানে শুধু পশু নয়,
কোরবানি মানে নিজের স্বপ্নকে,
নিজের ভালোবাসাকে আল্লাহর সামনে রেখে বলার শক্তি—
"ইয়া আল্লাহ, আপনি যদি চান, আমি সব দিতে পারি।"
এই ছিল কোরবানির সূচনা।
কোনো হাট, কোনো আলিশান গরু, কোনো ফ্যাশন ছিল না।
ছিল শুধু একটি ঈমানী সিদ্ধান্ত, এক পবিত্র সিজদা, এক অলৌকিক বিসর্জন।
প্রিয় শ্রোতা,
আজ আমরা হয়তো পশু কোরবানি দিই,
কিন্তু আল্লাহ আমাদের হৃদয়ের কোরবানি খোঁজেন।
আজও আল্লাহ প্রশ্ন করেন—
"তুমি কী ত্যাগ করতে পারো আমার জন্য?"
কোরবানি—এটা কেবল একটি উৎসব নয়,
এটা এক ইবাদত, এক ইতিহাস, এক আহ্বান—
যেখানে প্রতিটি ছুরির ঘায়ে উচ্চারিত হয়,
"ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন"
— "আমার নামায, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু — সবই আল্লাহর জন্য।"
(সূরা আন’আম: ১৬২)
ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)-এর সেই ঐশী ঘটনার পর,
আল্লাহ এই কোরবানি রসূলগণ ও তাদের উম্মতের জন্য এক ইবাদত হিসেবে স্থির করে দেন।
তবে এর পূর্ণ রূপ আসে যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনায় হিজরত করেন।
সেই হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে কোরবানি ফরজ না হলেও
সুন্নাতে মুআক্কাদাহ হিসেবে নিয়মিত করা হয়।
📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য,
কিন্তু কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ বলেন, এটি আমার জন্য, এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।”
— (সহীহ মুসলিম: ১৯৭৬)
এটি ছিল এক বিপ্লব,
যেখানে মানুষ শুধু পশু জবাই করত না,
বরং নিজের ভেতরের অহংকার, লোভ, হিংসা ও দুনিয়ার প্রতি মোহ—
এসবকেও কোরবানির সঙ্গে জবাই করত।
তাই রাসূল ﷺ হাদীসে বলেন—
“যে ব্যক্তি কোরবানির সামর্থ্য রাখে, কিন্তু তা করে না,
সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।”
— (ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)
এই হাদীস শুধু নির্দেশ নয়—এটি এক কড়া সতর্কতা।
কোরবানি হলো ঈমানের পরিচয়,
যেখানে আপনি আল্লাহকে দেখান—
আপনি দুনিয়াকে নয়, তাঁর হুকুমকেই ভালোবাসেন।
প্রিয় শ্রোতা,
আমরা যখন পশু কোরবানি করি,
আসলে তখন শুধু শরীরের চামড়া ছেঁড়া হয় না—
আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায় সেই ‘নিয়্যাহ’, সেই ‘তাকওয়া’—
📖 কুরআনে বলা হয়:
“আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তোমাদের পশুর গোশত বা রক্ত,
বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।”
— (সূরা হজ্জ: ৩৭)
এই আয়াত যেন এক আয়নার মতো আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা কোরবানি করছি—কিন্তু ভিতরটা কি কেটে দিচ্ছি?
আমরা পশু দিচ্ছি—কিন্তু কি আমরা লোভ, অহংকার, কৃপণতা, দুনিয়াপ্রীতি কোরবানি করছি?
রাসূল ﷺ তাঁর নিজের হাতে কোরবানি করতেন,
উচ্চারণ করতেন—
“হে আল্লাহ! এটি আমার পক্ষ থেকে ও আমার উম্মতের পক্ষ থেকে।”
— (সহীহ মুসলিম: ১৯৬৭)
তিনি শুধু কোরবানি করেননি,
তিনি কোরবানিকে ঈমানের উৎসর্গীয় রূপে পরিণত করেছিলেন।
আজকের দিনে যখন আমরা কোরবানি করি,
আমরা হয়তো পশুর দাম, রঙ, আকৃতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি,
কিন্তু রাসূল ﷺ শিখিয়েছেন—
কোরবানি মানে ‘প্রদর্শন’ নয়,
কোরবানি মানে আল্লাহকে খুশি করার নিঃশর্ত চেষ্টা।
এই ত্যাগের ঐতিহ্যই আজ আমাদের জীবনের বাস্তবতায় হারিয়ে যাচ্ছে।
যেখানে মানুষ মাংস বণ্টন করে, কিন্তু তাকওয়া বিলিয়ে দেয় না।
যেখানে ছবি তোলে, কিন্তু চোখের পানি ঝরে না।
এই disconnect-ই আমাদের আজকে ফিরিয়ে আনে সেই মূল প্রশ্নে—
“আমার কোরবানি কি কবুল হচ্ছে?”
একদিন যখন আকাশ শান্ত, বাতাস স্থির, তখন একজন মানুষ ছুরি হাতে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হন। সেই একটি মুহূর্ত কেবল একটি ঘটনা ছিল না—এটি ছিল কোরবানির ইতিহাসের সূচনা। আজ শত শত বছর পেরিয়ে আমরা সেই কোরবানি পালন করি, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা কি তার আত্মাকে ধারণ করি?
আল্লাহ তাআলা কুরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন,
“আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তোমাদের পশুর গোশত বা রক্ত,
বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।”
— (সূরা হজ্জ: ৩৭)
তাহলে আজ আমরা কিসে ব্যস্ত?
মাংসের ওজন? পশুর দাম? সামাজিক স্ট্যাটাসের প্রতিযোগিতা?
কোরবানি তো ছিল আমাদের দুনিয়াবি মোহ কেটে ফেলার একটি মহৎ ইবাদত।
এটি ছিল এক বিসর্জনের আয়োজন—যেখানে নিজের লোভ, অহংকার, কৃপণতা—সব ফেলে রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে বেছে নেওয়ার শিক্ষা।
রাসূল ﷺ এর যুগে সাহাবিরা কোরবানি করতেন,
আর তাকওয়ার সাথে কান্না করতেন।
তাঁদের কাছে কোরবানি ছিল আত্মিক প্রশান্তি অর্জনের পথ,
আর আজ আমাদের কাছে অনেক সময় তা হয়ে গেছে উৎসবের বাহ্যিকতা।
আমরা যদি চাই এই ইবাদত কবুল হোক,
তবে আমাদের কোরবানি হতে হবে দু’টি স্তরে—
১) বাহ্যিকভাবে শরিয়তের নিয়ম মেনে করা পশু কোরবানি
২) এবং ভেতর থেকে আত্মাকে আল্লাহর সামনে সঁপে দেওয়া কোরবানি
আমরা যদি এই কোরবানি থেকে শিক্ষা না নেই,
তবে প্রতিবার ঈদের দিনে জবাই করলেও
আমাদের হৃদয় কখনো আল্লাহর সন্তুষ্টির আলোয় জেগে উঠবে না।
প্রিয় শ্রোতা,
আজ যদি আমরা প্রশ্ন করি নিজেদের—
“এই ঈদে আমি কিসে ত্যাগ করছি? কাকে সন্তুষ্ট করতে চাই?”
তবে উত্তর পাওয়া সহজ হয়ে যায়।
আল্লাহর জন্য ত্যাগ করা মানে কেবল পশু জবাই নয়—
কারো প্রতি ক্ষমা করা, গোপনে দান করা, অহংকার ভাঙা,
একটি ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেওয়াও একেকটি কোরবানি।
তাই এই কোরবানি হোক শুধু রক্ত আর গোশতের নয়—
হোক চরিত্র, হৃদয় ও নিয়তের আত্মিক পরিবর্তনের এক দৃশ্যমান রূপ।
আল্লাহ আমাদের সেই কোরবানি কবুল করুন,
যেটি আমরা হয়তো কারো চোখে না দেখালেও,
তিনি হৃদয়ের অন্তরালেই দেখতে পান।
📢 প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে এই বার্তাটি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়া জরুরি,
তবে আজই সাবস্ক্রাইব করুন Ummah Kantho ইউটিউব চ্যানেলটি।
আর আমাদের ফেসবুক পেইজেও যুক্ত হয়ে যান—
যেখানে আপনি নিয়মিত পাবেন এমন হৃদয়ছোঁয়া কনটেন্ট,
যা কেবল কান নয়, হৃদয় বদলে দেয়।
ইনশাআল্লাহ, সামনে আসছে আরও নতুন আলো,
নতুন অধ্যায়, নতুন জাগরণ।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ
📢 আপনি যদি সত্য জানতে চান, ইসলামী জ্ঞানের আলোয় নিজেকে প্রস্তুত করতে চান — তাহলে আজই আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন, আর Facebook পেইজে যুক্ত থাকুন:
কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা শুধু পশু কোরবানিতে নয়—এটি হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মত্যাগের পথ। আসুন, আমরাও প্রস্তুত হই ত্যাগের এই মহান ব্রতে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন