মনকে তুমি বুঝিয়ে বল, আল্লাহ আছে তোমার সাথে

মনকে তুমি বুঝিয়ে বল, আল্লাহ আছে তোমার সাথে


কখনো কি এমন অনুভব হয়েছে—
আপনার মনটা চুপ করে বসে আছে,

কথা বলছে না,
কাঁদতে চায়, কিন্তু চোখের পানি শুকিয়ে গেছে?

আপনি ব্যস্ত, আপনি হাসছেন, কাজ করছেন,
কিন্তু ভিতরে কিছু একটা কেঁদে যাচ্ছে।

মনে হয়, কারও সাথে কিছু শেয়ার করারও জায়গা নেই।
সব আছে—তবুও শূন্য লাগে।

ঠিক সেই মুহূর্তে মনকে বলুন…
“তুমি চিন্তা করো না, আল্লাহ আছেন আমাদের সাথে।”


আপনারা শুনছেন Ummah Kantho…
এই কণ্ঠ সেইসব মুহূর্তে কথা বলে,
যখন মানুষ পাশে থাকে না,
যখন নিজের চিন্তাগুলোই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

আমরা আল্লাহর আলোয় আপনাকে জাগাতে চাই,
আপনার ক্লান্ত হৃদয়কে বলতে চাই—
আপনি একা নন। আপনি হারিয়ে যাননি।

আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন,
আর আমাদের ফেসবুক পেজেও যুক্ত থাকুন—
আপনার ভেতরে জমে থাকা অন্ধকারে একটুকরো আলোর স্পর্শ নিয়ে।


কুরআন এক জায়গায় খুব সুন্দর করে বলে দেয়—
মন কখন শান্ত হয়:

📖
“নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।”
📚 সূরা রা’দ: আয়াত ২৮

আপনার মন অস্থির?
আপনার ভেতর দুঃশ্চিন্তা?
আপনার ভাবনায় শত রকম প্রশ্ন ঘুরছে?

তাহলে উত্তর একটাই—
আল্লাহকে স্মরণ করো।

মনকে বলো—
“যে আল্লাহ এই হৃদয় সৃষ্টি করেছেন,
তিনি জানেন এটা কখন কাঁদে, আর কখন ভেঙে পড়ে।”


মন বোঝে,
তবে সবসময় শান্ত হতে চায় না।

তাই একসময় নিজের সাথেই কথা বলতে হয়।

“মন, তুমি শুনো—
আজ মানুষ হয়তো আমার কষ্ট বুঝলো না,
কিন্তু আমার রব জানেন আমি কতটা কষ্টে আছি।”


রাসূল ﷺ এর জীবনেও ছিল এই একান্ত আত্মিক কথোপকথন।

তিনি যখন তায়েফে গিয়েছিলেন দাওয়াত দিতে,
আর তারা তাঁকে পাথর মেরেছিল,
তিনি মাথা নিচু করে শুধু বলেছিলেন:

“হে আল্লাহ! আপনি যদি আমার উপর সন্তুষ্ট থাকেন, তবে আমি কিছুই মনে করি না।”

এই কথাটি ছিল এক আহত, রক্তাক্ত হৃদয়ের আত্মসমর্পণ—
যেখানে মন শুধুমাত্র একটিই জবাব চেয়েছে:
আল্লাহ সন্তুষ্ট তো? তাহলে আমি ঠিক আছি।


মন যখন অস্থির হয়, তখন সে সমাধান চায়,
সমর্থন চায়, সঙ্গ চায়।

কিন্তু মানুষ সবসময় পারে না।
তখন একমাত্র উপায়—
মনকে বোঝানো,
আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া।

📖
“যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।”
📚 সূরা তালাক: আয়াত ৩

মনকে বারবার বলুন—
“তুমি ভয় পেয়ো না, আমি তাওয়াক্কুল করছি।”


এক সাহাবি বলেছিলেন:

“আমরা এমন যুগে ছিলাম,
যেখানে ঈমান ছিল মনে, শান্তি ছিল অন্তরে।
আর এখন আমরা ভয় পাই দুনিয়াকে,
আত্মা খালি হয়ে গেছে।”

তবে এই খালি আত্মা, খালি মন,
আবারও পূর্ণ হতে পারে।

তাওবার অশ্রুতে,
দোয়ার শব্দে,
কুরআনের শব্দে।


প্রিয় ভাই ও বোন,
আপনি যদি এখনো বেঁচে থাকেন,
তাহলে বুঝে নিন—
আল্লাহ আপনার মনকে এখনো ঠিক করতে চান।

তিনি এখনো চান, আপনি যেন তাঁর দিকে ফিরে আসেন।

আপনার ভেতরের ব্যথা,
যা কারো চোখে পড়ে না,
আল্লাহর দরবারে তা প্রতিফলিত হয়—
দোয়া হয়ে, কান্না হয়ে,
আর শেষমেশ সান্ত্বনা হয়ে।


আজ রাতের পর হয়তো আপনি বলবেন—
“হ্যাঁ মন, আমি বুঝেছি, তুমি একা নও।
আল্লাহ আছেন।
আর যখন তিনি আছেন, তখন কিছুই শেষ নয়।”

মন মাঝে মাঝে এমন এক জায়গায় চলে যায়—
যেখানে যুক্তি চলে না,
যেখানে মানুষ ব্যর্থ,
আর যেখানে একমাত্র ভাষা হয় কান্না।

চোখ হয়তো শুকনো,
কিন্তু অন্তরে এক রকম ঝড় বয়ে যাচ্ছে,
যা কারও চোখে পড়ে না।
আপনারও ভাষায় আসে না।

ঠিক এই সময়ে মনকে বোঝাতে হয়,
একটি বাক্যে, একটি সত্যে—
“আল্লাহ আছেন, আর তিনি যথেষ্ট।”


মন চায় না অপেক্ষা করতে।
সে চায় এখনই সব সমাধান।

কিন্তু ঈমান শেখায়—
আল্লাহর সিদ্ধান্তে রয়েছে সময়, রহমত এবং হিকমাহ।

📖
“তোমরা যদি ধৈর্য ধরো ও তাকওয়া অবলম্বন করো,
তবে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে।”
📚 সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১২৫

তাহলে এখন আপনি যত অস্থির অনুভব করছেন,
তা কোনো “শেষ” নয়।
বরং এটি একটি প্রস্তুতির সময়।

আপনার মন হয়তো আজ শান্ত নয়,
কারণ সে বোঝেনি—
আল্লাহ আপনাকে দেরিতে দিচ্ছেন,
কিন্তু ঠিক সময়ে দিচ্ছেন।


রাসূল ﷺ এর সাহাবীদের মধ্যেও এমন মুহূর্ত এসেছে,
যখন তারা যুদ্ধের পর ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত, আহত হয়ে পড়তেন।
তখন আল্লাহ তায়ালা কুরআনে শান্তির আয়াত নাজিল করতেন।

📖
“তোমরা চিন্তা করো না, দুশ্চিন্তা করো না—
তোমরাই বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হও।”
📚 সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৩৯

এই আয়াত শুধু যুদ্ধের ময়দানের জন্য নয়—
এই আয়াত প্রতিটি মুসলমান হৃদয়ের জন্য—
যে তার চিন্তার, কষ্টের, আতঙ্কের ময়দানে দাঁড়িয়ে।


মনকে শান্ত করা যায় কিভাবে?

প্রথমত: কুরআনের শব্দে।
প্রতিদিন মাত্র একটি আয়াত পাঠ করুন,
উচ্চারণ করুন মন দিয়ে—
এ যেন এক অদৃশ্য ওষুধ।

দ্বিতীয়ত: নামাযে ধীরতা আনুন।
প্রতিটি রুকু, সিজদা মনকে বলে—
“তুমি একা নও, তুমি সেজদায় আছো, মানে আল্লাহর ছায়ায় আছো।”

তৃতীয়ত: চুপচাপ দোয়া করুন।
যে দোয়া কেউ জানে না,
সেই দোয়াই মনকে প্রশান্ত করে সবচেয়ে বেশি।


একজন মানুষ যখন মন খুলে কাঁদতে পারে না,
তখন তার ভেতর জমে যায় বিষাদ।
আর সেই বিষাদ একসময়
আল্লাহর প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়।

তাই দোয়া হোক মনের জবাব।

বলুন:

“হে আল্লাহ, আমি জানি না আমি কী চাই,
তবে আপনি জানেন আমার মনের গভীরতা।”

“আমি জানি না কীভাবে শুরু করবো,
তবে আপনি জানেন কিভাবে শেষ করবো।”


আপনার যদি নিজের উপর আস্থা না থাকে,
তাহলে মনকে বলুন—
“আমি নয়, আল্লাহ পারবেন।
আর তিনি যখন আমার সাথে,
তখন আমি পারবো।”

📖
“যে আল্লাহকে ভয় করে,
তার জন্য তিনি পথ খুলে দেন।”
📚 সূরা তালাক: আয়াত ২

মনকে বোঝান—
সমস্যার চেয়ে শক্তিশালী আপনি নন,
কিন্তু আপনার রব সেই সমস্যারও মালিক।
তিনি চাইলে— কষ্ট শান্তিতে পরিণত হতে সময় লাগে না।


হাদীসে এসেছে:

📚
“আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার সাথে থাকি।”
📘 সহীহ বুখারী

তাহলে মনকে বোঝাতে শেখান—
"আমার আল্লাহ আমার পাশে আছেন।
তিনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না।
তিনি আমার কান্না দেখছেন।
আমার না বলা কথাও শুনছেন।"


কখনো রাতের নিঃশব্দে,
আপনি চুপচাপ সিজদায় পড়ে যান।
মন কিছু না বলুক, আপনি বলুন:

“হে আল্লাহ, আমি ক্লান্ত।
আপনার দরজায় ফিরে এসেছি।
আমার মন ভেঙে গেছে— আপনি গড়ুন।”

এই দোয়া এমন নয় যে আপনাকে এক মুহূর্তে স্বস্তি দেবে,
কিন্তু এটিই আপনার মনের পুনর্গঠনের শুরু।


প্রিয় হৃদয়,
আপনি ভেঙে পড়েননি,
আপনি কেবল গভীরভাবে অনুভব করছেন।

আপনি ব্যর্থ হননি,
আপনি কেবল নতুনভাবে তৈরি হচ্ছেন।

আপনার মন হয়তো এখনো বোঝে না,
কিন্তু আপনি বারবার তাকে বোঝান—
“আল্লাহ আছেন আমার সাথে।”

মন মাঝে মাঝে এমন স্তব্ধ হয়ে যায়,
যেখানে কাঁদতেও ইচ্ছা করে না,
ভয়, হতাশা, আত্মগ্লানিতে সে চুপ হয়ে থাকে—
যেন হঠাৎ থেমে যাওয়া কোনো সুরের মতো।

ঠিক সেই জায়গা থেকেই নতুন শুরু হয়।

কারণ যেখানে মানুষ থেমে যায়,
সেখান থেকেই আল্লাহ বলেন—
“চল, আমি আছি।”


এই জীবনে কিছু কষ্ট আসে,
যা আমাদের মন গুঁড়িয়ে দিতে চায়।
কিন্তু জানেন কী?

এই ভাঙা মনই
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।

📖
“আল্লাহ ভাঙা হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকেন।”
📚 (তাফসিরে ইবনে কাসীর – সূরা বাকারা)

আপনি যদি কোনোদিন এমন কষ্টে থাকেন,
যেখানে কেউ বুঝে না, কেউ পাশে থাকে না,
তাহলে মনকে বলুন—

“তুমি ভয় পেয়ো না, তুমিই সেই ভাঙা হৃদয়,
যার পাশে আল্লাহ নিজে থাকেন।”


আমরা অনেক সময় নিজেদের প্রশ্ন করি:

“আমার কি এত পাপ?
আমার ওপর এত বিপদ কেন আসে?”

কিন্তু হাদীসে এসেছে:

📚
“যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তাকে তিনি পরীক্ষা করেন।”
📘 (তিরমিযি)

এমনকি রাসূল ﷺ–কে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেওয়া হয়েছিল।
তবুও তিনি কখনো হতাশ হননি।
কারণ তিনি জানতেন—
আল্লাহ যার সাথে থাকেন,
সে কখনো একা নয়।


মন যখন অস্থির হয়,
তখন সে কুরআনের আয়াত চাই।

তখন তাকে মনে করিয়ে দিতে হয়:

📖
“তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য আরও বাড়িয়ে দেব।”
📚 সূরা ইবরাহিম: আয়াত ৭

তাহলে মনকে বলুন—
“তুমি এখনই শুকরিয়া করো—
এই যে নিঃশ্বাস নিচ্ছো, এই তো আল্লাহর রহমত।”


মনের প্রশান্তি কেবল ‘সমস্যা শেষ হলে’ আসে না—
প্রশান্তি আসে তখন,
যখন আপনি বুঝে ফেলেন—
আল্লাহ সব দেখছেন, জানেন, পরিকল্পনা করছেন।

তখনই আপনার ভেতর থেকে এক আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়।
নতুন দিনের, নতুন পথের, নতুন আলোর।

আপনার রাত হয়তো এখনো অন্ধকার,
কিন্তু ফজরের ওয়াদা তো আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন—

📖
“নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।”
📚 সূরা ইনশিরাহ: আয়াত ৬


তাহলে আপনি আজ যে কষ্টে আছেন,
সে কষ্ট আপনাকে শেষ করবে না—
বরং তৈরি করবে।

মনকে বোঝান—
“তুমি এখন গড়ছো নিজেকে,
এই কষ্ট তোমার প্রতিদান হবে।”

আপনার প্রতিটি দোয়া, প্রতিটি কান্না,
সিজদার প্রতিটি শব্দ—
আল্লাহর কাছে জমা হচ্ছে।


তাহলে এখন কী করবেন?

মনকে তাওয়াক্কুল শেখান।
নিজে বিশ্বাস না করলেও, মুখে বলুন—
“আল্লাহ যথেষ্ট। তিনিই সাহায্যকারী।”

প্রতিদিন একটি করে আয়াত মনে রাখুন।
যেমন:
📖 “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিইমাল ওয়াকীল”
(আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক)

গোপনে কান্না করুন আল্লাহর কাছে।
কারণ হাদীসে এসেছে—
📚
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে অশ্রু ফেলে,
তার চোখ কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।”
📘 (তিরমিযি)


আপনার ভেতর যদি কিছু না থাকে,
তাহলেও একটি বাক্য রাখুন হৃদয়ে—

“আল্লাহ আছেন আমার সাথে।”

এই একটি বাক্যই
আপনাকে স্রোতের বিপরীতে চলার সাহস দেবে।

আপনাকে দেবে শক্তি, যখন সবাই চলে যায়।
দেবে প্রশান্তি, যখন কেবল আপনি আর আপনার চোখের পানি।


প্রিয় হৃদয়…
আপনি ভালো থাকুন বা খারাপ,
আপনি সফল হন বা ব্যর্থ,
আপনি দোয়া করুন বা থেমে যান—
আল্লাহ এখনো আছেন।

তিনিই সেই রব,
যিনি শূন্য মনেও তাঁর ভালোবাসা ঢেলে দিতে পারেন।


এই ছিল আজকের তৃতীয় ও শেষ পর্ব।

আল্লাহ যদি আপনাকে এই শব্দগুলো শোনার সুযোগ দেন,
তাহলে বুঝে নিন—
তিনি আপনাকে ছেড়ে যাননি।

💠 যদি এই কথাগুলো আপনার হৃদয়ে আলো জ্বালিয়ে থাকে,
তবে আমাদের Ummah Kantho চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন,
আর আমাদের Facebook পেজ-এ যুক্ত থাকুন—
যেখানে প্রতিটি শব্দ আপনাকে আরো শক্ত, আরো ঈমানদার করে তোলে।


হে আল্লাহ,
আমাদের অন্তরগুলো যদি অস্থির হয়ে পড়ে,
তবে আপনি যেন নিজ হাতে শান্ত করেন।
আপনার জিকিরে আমাদের মন জুড়ে দিন।
আপনার ভালোবাসায় আমাদের হৃদয় পূর্ণ করে দিন।
আর সেই শান্তি দিন—
যা শুধু আপনিই দিতে পারেন।

আমিন, ইয়া সালাম, ইয়া কফফার।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন