তীব্র পিপাসায় কুকুরকে পানি খাওয়ানো নারী জান্নাতে গেলেন

 

তীব্র পিপাসায় কুকুরকে পানি খাওয়ানো নারী জান্নাতে গেলেন



মানুষের হৃদয় কতটুকু কোমল হলে, এক পশুর তৃষ্ণাও সহ্য হয় না? আর সেই করুণা, যখন এক বিপথগামী নারীর অন্তর থেকে উৎসারিত হয়—তখন আল্লাহর দয়া কিভাবে আকাশচুম্বী হয়, তারই এক নিদর্শন হলো এই ঘটনা।

🕋 সহীহ হাদীসে বর্ণিত একটি হৃদয়স্পর্শী কাহিনি

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“একবার এক পাপিষ্ঠ নারী—যিনি বেশ্যাবৃত্তিতে লিপ্ত ছিলেন—একদিন পথ চলতে গিয়ে তীব্র তৃষ্ণায় কাতর এক কুকুরকে দেখতে পেলেন। সে নিজে কূপে নেমে পানি তুললো এবং নিজের জুতা দিয়ে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তার এই কাজ পছন্দ করলেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।”
— (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৩১৮)

এই সংক্ষিপ্ত হাদীসে লুকিয়ে আছে মানবিকতা, আল্লাহর রহমত এবং আমাদের জীবনের একটি মহান শিক্ষা—দয়া ও করুণা কখনো বৃথা যায় না।


🌾 কুকুর? তাও জান্নাতের দরজা খুলে দিল?

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন। একটি কুকুরকে পানি খাওয়ানোর জন্য, এক নারী—যিনি নিজের জীবন গোনাহে ভরিয়ে ফেলেছিলেন, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে গেল। কারণ, আল্লাহ মানুষকে তার অন্তরের অবস্থা অনুযায়ী বিচার করেন। গোনাহের পাহাড়ের নিচে হয়তো থাকে একটি অনুতপ্ত হৃদয়, একটি পরিতাপভরা আত্মা।

এই নারী হয়তো বহু বছর ধরে অন্যায় করছিলেন। কিন্তু সেই দিন, সেই মুহূর্তে তার হৃদয়ে যে দয়া ও করুণা জাগ্রত হয়েছিল, তা ছিল খাঁটি, স্বার্থহীন। আর আল্লাহ সেই অন্তরের খাঁটি আমলকে কবুল করলেন।


💧 ঘটনা যেভাবে ঘটে

হাদীসের অন্যান্য বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি, এই নারী পথ চলছিলেন এক নির্জন এলাকায়। প্রচণ্ড গরমে হঠাৎ তার দৃষ্টিতে আসে একটি কুকুর, যেটি জিহ্বা বের করে কাঁপছে, কারণ প্রচণ্ড পিপাসা তাকে কাহিল করে দিয়েছে।

নারীটির নিজের কাছে পানি ছিল না। দূরে একটি কূপ ছিল, কিন্তু সেখানে কোনো দড়ি বা বালতি ছিল না। তাই তিনি নিজেই কূপে নেমে গেলেন, নিজের জুতা দিয়ে পানি তুললেন, এবং সেই জুতা দিয়ে কুকুরটিকে পানি খাওয়ালেন।

কুকুরের পিপাসা মিটলো—আর সেই ক্ষণেই আল্লাহর রহমত তার গোনাহ মাফ করে দিলো।


💡 কী শেখা যায় এই গল্প থেকে?

এই হাদীসটি ছোট হলেও, আমাদের জীবনের জন্য একটি গভীর বার্তা বহন করে:

১. 💖 দয়া ও করুণা আল্লাহর নিকট অতীব প্রিয়

আল্লাহ তাআলা দয়ালু। আর তিনি চাচ্ছেন, তাঁর বান্দারাও দয়ালু হোক। মানুষ তো বটেই, পশুর প্রতি দয়া করাও ইসলামের শিক্ষা। কোনো নিরীহ প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া যেমন গুনাহ, তেমনি কোনো প্রাণীর প্রতি দয়া করা হতে পারে জান্নাতের চাবি।

২. 🔁 গোনাহের দরজা যত বড় হোক, তাও তওবার দরজা বন্ধ নয়

এই নারী ছিলেন একজন প্রকাশ্য গোনাহগার। কিন্তু তার একটি একান্ত দয়ার কাজ তার গোনাহগুলো ঢেকে দিলো। আমাদের মধ্যেও হয়তো অনেকেই এমন, যারা নিজেদের অতীত নিয়ে লজ্জিত—তবে এই হাদীস আমাদের শেখায়, আল্লাহর দরজা কখনো বন্ধ হয় না।

৩. 🧭 আমলের মান ছোট না বড়—আল্লাহর জন্য কতটা খাঁটি, সেটাই আসল

পানি খাওয়ানো—এটা কি খুব বড় কাজ? হয়তো না। কিন্তু যখন তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়, তখন তা বিশাল আমলে রূপ নেয়।


🧕 নারী হওয়াই নয়, দয়ালু হওয়াই পরিচয়

এই গল্পটি বিশেষভাবে নারীদের জন্যও একটি প্রেরণা। সমাজ অনেক সময় নারীদের ভুলে ফেলে, তাদের ভুলে ফেলে দেয় যেকোনো ভুলকে চিরস্থায়ী বলে। কিন্তু এই হাদীস প্রমাণ করে—একজন নারী, যদি অন্তরে খাঁটি দয়া রাখেন, তবে তিনি আল্লাহর কাছেও প্রিয় হতে পারেন।


📿 আজকের বাস্তবতায় প্রয়োগ

আমরা আজ পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা, অবহেলা, এবং অমানবিক আচরণকে স্বাভাবিক করে ফেলেছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ সবসময় পশুর অধিকার রক্ষা করতেন। তিনি বলেন:

“তোমরা যদি কোনো পশু জবাই করো, তবে তা করো দয়া ও সম্মানের সাথে।”
— (মুসলিম)

এমনকি একবার তিনি একটি উটের কান্না দেখে তার মালিককে শাসন করেছিলেন, কেন সে উটটিকে অভুক্ত রেখেছে।


এই হাদীস আমাদের চোখ খুলে দেয়—আমল শুধু নামায, রোযা, হজ, যাকাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা প্রতিটি ভালো কাজ—even যদি সেটা হয় একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ানো—তাও হতে পারে আমাদের জান্নাতের পথ।

আজ আমরা যদি আমাদের চারপাশে কোনো কষ্টে থাকা মানুষ, পশু, এমনকি একটি গাছকেও একটু পানি দেই—হতে পারে তা-ই আমাদের আখিরাত বদলে দেবে।

📢 আপনি যদি জানতে চান, কীভাবে একটি ছোট দয়ার কাজ জান্নাতের কারণ হতে পারে — তাহলে আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং Facebook পেইজে যুক্ত থাকুন ইসলামের আলোয় হৃদয় গড়তে:

রাসূল (সা.) বলেছেন: “এক নারী কুকুরকে পানি খাওয়াল, তার এই কাজের জন্য আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করলেন।” (সহীহ বুখারী: ৩৩২১)
ছোট কাজ কখনো ছোট নয় — যদি তা হয় খাঁটি নিয়ত আর দয়ার ছোঁয়ায় ভরা। আমরা কি এমন কোনো দয়ার কাজ করেছি আজ?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন